ঘর থেকেই গড়ে ওঠে আদর্শ সমাজ: আদর্শ দম্পতিদের অবদান
পরিবার হলো সমাজের মৌলিক ইউনিট। একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ এবং সুখী সমাজ গঠনের জন্য আদর্শ পরিবার অপরিহার্য। আদর্শ দম্পতিরা তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে এবং তাদের নীতিবোধ, মূল্যবোধ এবং সৎ আচরণ শেখান। সুন্দর, সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে আদর্শ দম্পতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া, ভালোবাসা ও সহযোগিতা থাকলে তা পরিবার ও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানবজীবন মানুষের মহামূল্যবান এক সম্পদ। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হচ্ছে যৌবন। হাদিসের মধ্যে রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন-কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে এসকল তরুণদের বসার সুযোগ দিবেন, যারা তরুণ বয়সের সময়কে আল্লাহর পথে ব্যয় করে কাটিয়েছে। (তিরমিজি)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে-তরুণ বয়সের ইবাদতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হবে। একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যে সমস্ত তরুণরা যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে। (ইবনে মাজাহ)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-হাশরের ময়দানে মানুষকে পাঁচটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তন্মধ্যে একটি হচ্ছে সে তার যৌবনকাল কিভাবে ব্যয় করছে। (মিশকাত)।
যৌবনকালে যুবক-যুবতিদের দ্রুত বিয়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে। তিনি বলেছেন, রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম। আমাদের কোনো কিছু ছিল না।
এ অবস্থায় রাসুল (সা.) আমাদের বলেন,
‘হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে ফেলে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে, লজ্জাস্থান সুরক্ষা করে। আর যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে। কেননা রোজা যৌনতাকে দমন করে।’ (সহিহ বোখারি)
পৃথিবীর সব ধর্ম ও জাতির মধ্যে বিয়ের প্রথা প্রচলিত আছে। বিয়ের মাধ্যমে অপরিচিত দুজন মানব-মানবী নতুন সম্পর্কের সূচনা করেন।কোরআন ও হাদিসে বিয়ের অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসে বিয়েকে ইমানের অর্ধেক আখ্যায়িত করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে অর্ধেক দ্বীন পেয়ে গেল। বাকি অর্ধেক লাভ করতে সে যেন মহান আল্লাহকে ভয় করে।’ (মুসনাদে আহমদ)।
আমাদের সমাজে আদর্শ দম্পতির সংখ্যা যত বেশি হবে সমাজও আমাদের আদর্শ পরিবার, আদর্শ সন্তান ও আদর্শ প্রজন্ম তত বেশি উপহার দেবে। ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতির আলোকে গড়ে তুলতে সুশিক্ষা ও নীতি-নৈতিকতার ওপর পরিচালনা করতে হবে আমাদের যুব সমাজকে। জীবনের প্রতিটি ধাপে সঠিক দিকনির্দেশনা ও দীনি শিক্ষাদান খুব জরুরী। আমাদের অভিভাবকদের উচিত তাঁর নিজের সন্তানদের চলাফেরা, আচার-আচরণ, বন্ধু নির্বাচন, শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালের যাবতীয় বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করা। আর এরই মধ্যে ছেলেমেয়ে আদর্শ সন্তান হিসেবে বিয়ের বয়সে উপনীত হলেই অর্ধেক দ্বীন পূরণ করে দেওয়া বাবা-মায়ের প্রধান দায়িত্ব।
বিয়েকে কঠিন নয়, সহজ করতে হবে—এটা ইসলাম চায়। বিয়ে যদি কঠিন করা হয়, তাহলে সমাজে ব্যভিচার আর অন্যায় বেড়ে যাবে। তবে বিয়ে যদি সহজ করা হয় তাহলে সমাজে ব্যভিচার কমবে শান্তি বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে এক হাদিসে বলা হয়েছে-
হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, তোমরা যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে [ জামে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪ ]
আমাদের সমাজে অনেকে এমন আছেন যে তাদের বিশ্বাস, বিবাহ করলে অভাব বেড়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩২)
এ আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বালেগ নারী-পুরুষ যদি বিবাহের উপযুক্ত হয়, তবে অভিভাবকদের উচিত তাদের বিবাহের জন্য চেষ্টা করা। এ ব্যাপারে বর্তমান সামর্থ্যই যথেষ্ট। বিবাহের পর স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সে অভাবে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় বিবাহ বিলম্বিত করা সমীচীন নয়। চরিত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করে বিবাহ দিলে অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য আল্লাহ তাআলা উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা করে দেবেন। (তাওজিহুল কোরআন)
ইবনে মাসউদ বলতেন, ‘তোমরা যদি ধনী হতে চাও, তবে বিবাহ করো।’ (মাআরেফুল কোরআন)
তাই বিয়েকে সহজ করা হলে এবং বিলম্বিত না করা হলে যুবক-যুবতীদের বিপদগামী হওয়া অনেকাংশেই হ্রাস পাবে। সমাজ অনৈতিকতা ও চরিত্রহীনতার ভয়ংকর আগ্রাসন থেকে ধীরে ধীরে পরিত্রাণ আমাদের যুব সমাজ । সর্বোপরি আদর্শ দম্পতির চাহিদাও অনেকটা পূরণ হবে। ফলে আদর্শ পরিবার, আদর্শ সন্তান, আদর্শ প্রজন্ম, আদর্শ জাতির বিনির্মাণ শুরু হবে।
এমআইপি